ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:
চলতি বছরে ঠাকুরগাঁওয়ে পরীক্ষামূলকভাবে মালচিং পদ্ধতিতে গ্রীষ্মকালীন ব্লাক বেবি জাতের তরমুজ চাষ শুরু হয়েছে।
মাচা পদ্ধতিতে ঝুলন্ত এ তরমুজে ফলন ভালো হওয়ায় ৫ লক্ষ টাকা লাভের আশা করছে ৪ কৃষক। আর চাষ ও ফলন বৃদ্ধিতে সব ধরনের সহায়তা করেছে সরকারের সহযোগী উন্নয়ন সংস্থা ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন।
মাঠ জুড়ে থোকায় থোকায় ঝুলছে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ । বর্তমানে আধুনিক চাষ ব্যবস্থার জনপ্রিয় মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করা হয়েছে এই “গ্রীষ্মকালীন ব্লাক বেবি জাতের তরমুজ । অসময়ে উৎপাদন ও সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে এর চাহিদাও বেশি। মাটি বাহিত বালাই প্রতিরোধী ও সেচ সাশ্রয়ী মালচিং পদ্ধতিতে এ তরমুজ চাষ করায় খরচ কম এবং উৎপাদিত ফসলের গুণগত মানও বৃদ্ধি পেয়েছে। চারা রোপনের ৭০-৮০ দিনের মধ্যেই গাছ থেকে উত্তোলন করা যায় এই তরমুজ। ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাড়ী গ্রামের চার কৃষক সালাউদ্দিন, আজিমউদ্দিন, লুৎফর ও আসমা ৭ একর জমিতে তরমুজ লাগিয়ে এ বছর ৫ লক্ষ টাকা লাভের আশা করছে।
কৃষক লুৎফর জানান আমরা ইএসডিও’র সহযোগীতায় এই প্রথম ব্লাক বেবি তরমুজ চাষ করেছি । এই তরমুজ সম্পর্কে আগে আমাদের কোন ধারণা ছিলনা। এই চাষাবাদে আমরা মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করেছি পাশাপাশি এখানে কোন রাসায়নিক সার বা কিটনাশক ব্যবহার করা হয়নি। আমরা ব্যবহার করেছি ভার্মি কম্পোষ্ট ও ফোরেমন ফাঁদ । ৭ একর তরমুজ লাগাতে আমাদের খরচ হয়েছে প্রায় ৮-৯ লক্ষ টাকা। আশা করছি আমরা বিক্রি করতে পাড়বো প্রায় ১৪-১৫ লক্ষ টাকায় । যেহেতু এই সময় তরমুজ পাওয়া যায় না তাই এই ব্লাক বেবি তরমুজের প্রচুর চাহিদা বাজারে।
আরেক কৃষক আজিম উদ্দিন বলেন,আমাদের ক্ষেত দেখতে প্রচুর মানুষ আসছে। তারা এই তরমুজ দেখে চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। এই তরমুজ টি ঝাঙ্গীতে হওয়ায় অত্যন্ত সুস্বাদু হয়। সবচেয়ে বড় ব্যাপার এটি অসময়ের তরমুজ তাই এর প্রচুর চাহিদা।
আমরা পরিকল্পনা করছি আগামীবার আরও বড় পরিসরে এই নতুন জাতের তরমুজ আবাদ করবো। ধন্যবাদ জানাই পিকেএসএফ ও ইএসডিওকে।
কৃষক মরিরুল ইসলাম এসেছেন এই তরমুজ ক্ষেত দেখতে। তিনি বলেন আমিও পরিকল্পনা করেছি আগামী বছর থেকে এই তরমুজ লাগাবো । শুধু কৃষক মরিরুল ইসলাম নয় তার মতো অনেক কৃষকই এই ক্ষেত দেখতে ভিড় জামাচ্ছেন।
ইএসডিও’র সমন্বিত কৃষি ইউনিটের ফোকাল পার্সন বাবুল বনিক বলেন , গ্রীষ্মকালীন ব্লাক বেবি জাতের তরমুজ অত্যন্ত লাভ জনক চাষ । আমরা পিকেএসএফের অর্থায়নে ইএসডিও সমন্বিত কৃষি ইউনিট প্রজেক্ট এর আওতায় নতুন জাতের এই তরমুজ ৪ জন কৃষককে ৭ একর জমিতে উৎপাদনের জন্য চারা, সার, মালচিং পেপার সরবরাহ ও প্রশিক্ষণ দেয়াসহ সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছি।
ইএসডিও’র সমন্বিত কৃষি ইউনিটের কৃষি কর্মকর্তা মো:মোন্নাফ হোসেন বলেন ,ইএসডিও’র কৃষি ইউনিটের মূল উদ্দেশ্য হলো উদ্যোক্তা সৃষ্টি করে যে কোনো নতুন ফসলের ব্যাপক ভাবে প্রচার করা । কৃষক যেন আর্থিক ভাবে লাভবান হয় সেই লক্ষ্যে কাজ করা।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ইএসডিও কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও সার্বিক সহযোগীতা করে উচ্চ মূল্যের এ ফসল আবাদ করার মাধ্যমে কৃষকের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য যেমন কাজ করছে প্রকারন্তরে এটা আমাদের দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করছে। এটি অত্যন্ত লাভজনক ফসল। আমরা আশা করছি জেলায় এ ফসল অতি দ্রুত জনপ্রিয়তা পাবে।